ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
সহজিয়া প্রাণের মানুষের খোঁজে ঘুরে আসুন লালন মেলা!

“বাড়ির কাছে আরশিনগর
সেথা এক পড়শি বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে।
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
মনে বাঞ্ছা করি দেখব তারে
কেমনে সে গাঁয়ে যাই রে।
আমাদের প্রাণের সেই পড়শীর খোঁজে চলুন ঘুরে আসি ফকির লালনের সেই আরশিনগর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে।
সংসার, ধর্ম যার কাছে গৌণ, মানব প্রেমই যার কাছে মূখ্য। উপমহাদেশের আধ্যত্তিক সেই বাউলের নাম লালন ফকির। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে তিনি মানব প্রেমের সাধনা করে গেছেন। সেই জায়গাটাই লালনের ধাম।
কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পয়লা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই লালন শাহ’র শেষ শয্যা রচিত হয়। এরপর থেকে এ এলাকায় তার স্মরণোৎসব পালিত হয়ে আসছে। লালন গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহর জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোলপূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে লালন স্মরণোৎসব হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোলপূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন। সাধুদের মতে, লালন অনুসারীরা দোলপূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়।প্রতি বছর ১৬ থেকে ১৮ই অক্টোবর ২০১৮, ফকির লালন সাঁইজীর ১২৮তম তিরোধান বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ছেউড়িয়ায় সাঁইজীর ধামে তিনদিনের সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয় ।
অক্টোবর এর ১৬ তারিখ, বাংলা ১লা কার্তিক। লালন সাইজি এর মৃত্যুবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে কুষ্টিয়ার লালন আখড়ায় ৩ দিন ব্যাপী বিশাল মেলা হয় যা লালন মেলা নামে ও পরিচিত। রাত ভর চলে লালন গানের আসর। বছরের এই ৩ টা দিন লালন আখড়া থাকে জমজমাট। লালন মেলা উপলক্ষে আখড়াবাড়ীর লালন মাজারকে সাজানো হয় নানা সাজে। প্রধান ফটক আর মূল মাজারে সাদা, লাল, নীল আলোকসজ্জা, বিশাল তোরণ নির্মাণ ও মাজারের বাইরে কালী নদীর ভরাটকৃত জায়গায় স্থাপিত লালন মঞ্চের সামনে বিশাল ছামিয়ানা টাঙানো হয়। আলোচনা মঞ্চের চারপাশ লালন মাজারের প্রধান রাস্তাজুড়ে বসে গ্রামীণমেলা। মেলায় নানা রকম গৃহসামগ্রী, কাঠের তৈরি সাংসারিক নানা জিনিসপত্র, গরম জিলাপি, পাঁপড় ভাজা, লালনের গানের সিডি, গেঞ্জি, শন পাঁপড়ি, আখের শরবত, হোটেল, খই-বাতাসাসহ হরেক রকম পসরা বসে।
লালন মেলা কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার গাবতলী কিংবা টেকনিক্যাল মোড় থেকে এসবি, শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, খালেক পরিবহনের বাস বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকা-কুষ্টিয়া সরাসরি চলাচল করে। কুষ্টিয়া শহর থেকে রিকশা অথবা অটোরিকশায় লালন শাহের মাজারে যেতে পারেন। এছাড়াও ঢাকা-কুমারখালী সরাসরি অনেক বাস চলাচল করে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে চিত্রা ট্রেনে যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কুষ্টিয়ার অদূরে অবস্থিত পোরাদহ রেল স্টেশনে নেমে বাস কিংবা অটোরিকশায় চড়ে শহরে আসতে হবে।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকার জন্য শহরেই মানসম্মত অনেক হোটেল পাবেন। এর মধ্যে পদ্মা, হোটেল রিভার ভিউ, গোল্ড স্টার, সানমুন অন্যতম।
কোথায় খাবেনঃ
খাওয়ার জন্য রয়েছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। তার মধ্যে জাহাঙ্গীর হোটেল, শিল্পী হোটেল, শফি হোটেল, হোটেল খাওয়া-দাওয়া, মৌবন রেস্টুরেন্টসহ ৩টি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট পাবেন।