বাক্যহোমপেজ স্লাইড ছবি
সাত সমুদ্রের গল্প

সাকিব রহমান সিদ্দিকী শুভ: সমুদ্র (sea) বলতে বোঝায় বিশাল লবনাক্ত পানির হ্রদ, যা কি না মহাসাগরের (Ocean) সাথে সংযুক্ত। প্রাচীন ইউরোপ এবং ভারতে এই সাত সমুদ্রের কথা বলা থাকলেও এদের নির্ধারণ করা একটু জটিল কাজ। “Sail the seven seas” নাবিকদের মধ্যে প্রচলিত একটি বাগধারা। কারো কারো মতে এই সাত সমুদ্র বলতে আসলেই সাতটি সমুদ্র কে বোঝানো হয়েছে। এবং এই সাত সমুদ্র যে আসলে কোন গুলো এই নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। সাত সংখ্যার মাহাত্ম্য প্রশ্ন থেকে যায়, কেন সাত সমুদ্র? সাত সংখ্যাটির ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় একটা মাহাত্ম্য আছে। সপ্তমাশ্চার্য, রংধনুর সাত রঙ, বিখ্যাত রূপকথার গল্প স্নো হোয়াইটের সাত বামন, সৃষ্টির সাতদিনের উপখ্যান, ধ্যানের সাত চক্র কিংবা সাত বেহেশত এর কয়েকটি উদাহরণ। সাত সংখ্যাটি যেন বার বার ঘুরে ঘুরে আসে ইতিহাসের পাতা থেকে, গল্পে গল্পে রূপকথায়।
প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপের সাত সমুদ্র ইউরোপীয়ান নাবিকেরা প্রাচীনকালে ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের সাতটি সমুদ্রকে নিয়ে এই সাত সমুদ্রকে চিহ্নিত করতেন বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। এগুলো হলঃ
১। ভূমধ্যসাগর: পৃথিবীর ইতিহাসের প্রাচীনতম সভ্যতা এই সমুদ্রকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল। এই সমুদ্র আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত।
২। অ্যাড্রিয়াটিক সিঃ বলকান পেনিনসুলা আর ইটালিয়ান পেনিনসুলা এই সমুদ্র দিয়েই আলাদা হয়েছে। অ্যাড্রিয়াটিক সি, ভূমধ্যসাগরের একটি অংশ।
৩। কৃষ্ণ সাগরঃ কৃষ্ণ সাগর ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যবর্তী একটি সমুদ্র। এটিও ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত।
৪। লোহিত সাগরঃ লোহিত সাগর দক্ষিন থেকে উত্তরপূর্ব মিশর পর্যন্ত বয়ে যাওয়া একটি প্রণালী যেটি গালফ অফ আদেন এবং আরব সাগরের সাথে সংযুক্ত। সুয়েজ খাল লোহিত সাগরের সাথে ভূমধ্যসাগরের সংযোগ স্থাপন করে।
৫। আরব সাগরঃ ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আরব উপদ্বীপের মাঝামাঝি অবস্থিত আরব সাগর ভারত মহাসাগরের অংশবিশেষ।
৬। পার্শিয়ান গালফঃ পার্শিয়ান গালফ ইরান এবং আরব উপদ্বীপের মধ্যে অবস্থিত এবং ভারত মহাসাগরের অংশ।
৭। কাসপিয়ান সাগরঃ এটি এশিয়ার পশ্চিম প্রান্ত এবং ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদ। এর পানি লবনাক্ত বলে একে সাগর বলা হয়।
আধুনিক সাত সাগর অধুনা সাত সমুদ্র বা সাত সাগর বলতে মূলত মহাসাগর গুলোকেই বুঝানো হয়। প্রত্যেকটিই মূলত মহাসাগর অথবা মহাসাগরেরই অংশবিশেষ। তবে এই তালিকাটি সর্বজনস্বীকৃত। এগুলো হলঃ
১। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ২। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর ৩। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর ৪। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ৫। আর্কটিক মহাসাগর ৬। এন্টার্কটিক মহাসাগর ৭। ভারত মহাসাগর।
মজার ব্যাপার হল ভারত মহাসাগর কেও সাতটি সাগরে ভাগ করা হয়। এগুলো হলঃ
১। আরব সাগরঃ আরব সাগর বা সিন্ধু সাগর ভারত মহাসাগরের অংশবিশেষ, যার পশ্চিমে রয়েছে আরব উপদ্বীপ এবং পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশ। এর উত্তরে ইরান ও পাকিস্তান। দক্ষিণে এটি ভারত মহাসাগরের মূল অংশের সাথে মিলে গেছে।
২। বঙ্গোপসাগরঃ বঙ্গোপসাগর হল বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। এটি ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি প্রায় ত্রিভূজাকৃতি উপসাগর। এই উপসাগরের পশ্চিম দিকে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তর দিকে রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্ব দিকে রয়েছে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের ঠিক মাঝখানে বিরাজ করছে ভারতবর্ষের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
৩। আন্দামান সাগরঃ আন্দামান সাগর ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি সাগর। এর পশ্চিমে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরে মায়ানমার, পূর্বে মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া, এবং দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ। আন্দামান সাগর মালাক্কা প্রণালীর মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে সংযুক্ত।
৪। লোহিত সাগরঃ লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের একটি অংশ, যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করেছে। সাগরটি দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত। সাগরটির উত্তরাংশে সিনাই উপদ্বীপ, আকাবা উপসাগর এবং সুয়েজ উপসাগর অবস্থিত।
৫। জাভা সাগরঃ জাভা সাগর হলো ইন্দোনেশিয়ার সুন্ডা বালুচরের উপর অবস্থিত বিস্তীর্ণ এক অগভীর সাগর। এটি ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপমালার মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরদিকে রয়েছে বোর্নিও দ্বীপ; দক্ষিণে রয়েছে জাভা দ্বীপ। সুমাত্রা দ্বীপ এর পশ্চিমদিকে অবস্থিত এবং পূর্বদিকে রয়েছে সুলাওয়েসি দ্বীপ। এর উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত কারিমাতা প্রণালীর মাধ্যমে এটি দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে।
৬। পার্সিয়ান গালফঃ পারস্য উপসাগর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত। এটি ওমান উপসাগরের একটি বর্ধিত অংশ । বর্তমান ইরান (পূর্বেকার পারস্য)ও আরব উপদ্বীপের মধ্যে এর অবস্থান। পারস্য উপসাগরের প্রাকৃতিক প্রতিবেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ।
৭। সি অফ জানজঃ আফ্রিকার দক্ষিণ পূর্ব উপকূলের একটি কাল্পনিক সমুদ্র। এটি আরব নাবিকদের লাছে একটি ভয়ংকর জায়গা বলে প্রচলিত ছিল।