খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
সাদিও মানে: এক স্বপ্নবাজের নাম

মঞ্জুর দেওয়ান: সাদিও মানে! এক স্বপ্নবাজের নাম। যার জীবন নিয়ে সিনেমা বানানো সম্ভব! যে কি-না সেনেগালের রাস্তা থেকে উঠে এসেছেন লিভারপুলের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে। হয়েছেন ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনই নিজেকে নতুন করে মেলে ধরছেন সেনেগালের কালো মানিক। আজ জানবো সাদিও মানের উঠে আসার গল্প।
সাদিও মানের বিশ্বসেরা হয়ে উঠা কিংবা ফুটবলে আসার নেপথ্যে ২০০২ ফুটবল বিশ্বকাপ। সাউথ কোরিয়া-জাপানের সেই বিশ্বকাপে পুরো পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিলো সেনেগাল। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে বাজিমাত করেছিলো আফ্রিকার দেশটি। ৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়েছিল সেনেগাল। থিয়েরি অঁরি কিংবা জিদানের মতো তারকা সমৃদ্ধ দল নিয়ে পুঁচকে সেনেগালের কাছে আটকে গিয়েছিলো ফ্রান্স।
ফরাসিদের বিপক্ষে সেই জয় স্বপ্নবাজ করে তোলে মানেকে। সেদিনের দশ বছরের মানেকে পেয়ে বসে ফুটবলের নেশা। ফুটবল নিয়ে দেশের মানুষের উন্মাদনা মানের ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। যদিও বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার সেই পথ মোটেও সুখকর ছিলো না। ১৯৯২ সালে জন্ম নেয়া মানে বেড়ে উঠেছেন সেনেগালের বাম্বলি নামের এক অজপাড়া গায়ে। ইচ্ছে থাকলেই ফুটবল নিয়ে পরে থাকাটা সম্ভব ছিলো না।
ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে আড়ি দিয়েছিলো আর্থিক অবস্থা। মানেকে ফুটবলার হতে হলে সবকিছু ত্যাগ করতে হতো। তবে ত্যাগ শিকারে পিছুপা হননি। মানের বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। যে কারণে বাবা-মা চেয়েছিলেন, মানে বেছে নিবেন ধর্মীয় কোনো পেশা। কিন্তু মানে ছিলেন নাছোরবান্দা। বাবা-মা’র অনিচ্ছা থাকা সত্তেও মানেকে ফুটবল থেকে সরানো যাচ্ছিল না। ফুটবলের প্রতি মানের আগ্রহ দেখে সহযোগিতার হাত বাড়ান তার এক চাচা। মানের চাচা ও পরিবার ফসল বিক্রি করেখরচ জুগিয়েছিলো। শুধু তাই নয়; মানেকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলো পুরো গ্রাম।
বাম্বলির মানুষের চাঁদা তুলে ১৬ বছর বয়সে এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান রাজধানী ডাকারে। এরপর বাড়ি ফিরে পরিবারের সাথে চুক্তি করে বসেন, এখন থেকে আর স্কুল নয়; ফুটবল, ফুটবল এবং ফুটবলই হবে মানের জীবন। ডাকারে ফিরে জেনারেশন ফুট ফুটবল একাডেমিতে স্বপ্নপূরণের ফরম পূরণ করেন মানে। ফুটবলের প্রতি মানের ত্যাগ-নিবেদন আর প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে যান সব কোচিং স্টাফ। অনুশীলন ক্যাম্পে নজর কাড়েন মানে। ফরাসি স্কাউটদের নজরে পড়েন; এরপর উড়ে যান ফরাসি ক্লাব মেৎজে।
তবে সেখানে বেশিদিন থিতু হতে পারেননি আজকের সাদিও মানে। ২০১১-১২ সালে খেলেছেন মেৎজের হয়ে। এরপর সালজবুর্গ-সাউদাম্পটন হয়ে মানে এখন লিভারপুলের। ২০১৬ থেকে সার্ভিস দিচ্ছেন অল রেডসকে। দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের অন্যতম অ্যাটাকার। তারপরও থেমে নেই; প্রতিদিনই নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করছেন। আর গাইছেন, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো!