খেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
জীবন কিংবা গলফ কোর্সে নতুন দিনের বার্তাবাহক

মঞ্জুর দেওয়ান: কথায় আছে, বাস্তবতা কখনো কল্পনার জগৎকেও হার মানায়। এই কথাটির সাথে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। উক্তিটির সত্যতা কতটুকু সেটা নাহয় দুটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝানো যাক।
সাধারণ কৃষকের ঘরে জন্ম নেয়া আব্রাহাম লিংকন মার্কিন মুলুকের কর্তা হয়েছিলেন। আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্টকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট বলে অভিহিত করা হয়। এখন বলতে পারেন, আব্রাহাম লিংকনের ‘সাদাকালো’ আমলের সাথে এখনকার খুব একটা মিল নেই। তাহলে হালের নরেন্দ্র মোদির কথা বলা যেতে পারে। যিনি চা বিক্রেতা থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সাথে একটি ‘দেশীয়’ উদাহরণ যোগ করি, সিদ্দিকুর রহমান। যিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একমাত্র গলফার। যার জীবনের গল্প অনেকটা আব্রাহাম লিংকন ও নরেন্দ্র মোদির গল্পের চেয়েও বেশী নাটকীয়।
বস্তি থেকে উঠে আসা একটি ছেলে কিংবা বল বয় থেকে দেশের ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন হয়ে ওঠা। এই দুইয়ের অদ্ভুত মিশেল আছে সিদ্দিকুরের জীবনের গল্পে! শুধু দেশ বললে ভুল হবে। দেশের সীমানা পেরিয়ে সিদ্দিকুর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে চিনিয়েছেন। শিরোপা উল্লাস করেছেন। অথচ জীবনের শুরুটা ছিলো কতই না নিদারুণ!
জন্ম থেকে প্রচন্ড অভাবে বেড়ে ওঠা সিদ্দিকুরের জীবনের গল্প অনুপ্রেরণা হতে পারে অনেকের। শেকড় থেকে শিখরে কিভাবে যাওয়া যায় তার বড় উদাহরণ সিদ্দিক।
জন্মস্থান মাদারীপুর হলেও সিদ্দিকের বেড়ে ওঠা ধামালকোটের বস্তিতে। অভাবের তাড়নায় জন্মস্থান ছেড়ে ঢাকার এই সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সিদ্দিকের বাবা।
সে সময় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া সিদ্দিক শখের বসে প্রতিবেশীর সাথে কুর্মিটোলার গলফ ক্লাবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বল বয়ের কাজ পান তিনি। ভাগ্য বিধাতার ইশারায় বল কুড়ানোর কাজ থেকে পদোন্নতি পেয়ে খেলোয়াড়দের সহায়তা করার কাজ পান তিনি। বল বয় থেকে সিদ্দিক বনে যান ক্যাডি! আর এই ক্যাডি হিসেবে প্রমোশনের পরই গলফারদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহন করার সুযোগ পান তিনি। সেখান থেকেই গলফ খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে সিদ্দিকের। অতি আগ্রহ থেকে নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে লোহার দোকান থেকে গলফ খেলার ক্লাব বানান সিদ্দিক। আনকোরা সেই ক্লাব দিয়েই অনুশীলন চলতে থাকে সিদ্দিকের। নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ না পেলেও হতাশ হননি সিদ্দিক। সবুরে মেওয়া ফলে তত্ত্বের অনুসারী সিদ্দিকুরের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে। তৎকালীন গলফ ফেডারেশনের হর্তাকর্তারা বল বয় ও ক্যাডিদের প্রতিযোগিতামূলক গলফে খেলার সুযোগ করে দেন। কঠোর অনুশীলন আর ধৈর্যের মাধ্যমে অপেশাদার গলফে নিজেকে আলাদা করে চেনান সিদ্দিক। একে একে ১২ টি শিরোপা জিতে নেন দেশসেরা এই গলফার। যার মধ্যে ৫ টি শিরোপা ছিলো বাংলাদেশে। দুটি করে শিরোপা জিতেন, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায়। একমাত্র শিরোপাটি জিতেন ভারতে।
অপেশাদার গলফের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য সিদ্দিককে নিয়ে যায় পেশাদার গলফে। যার শুরু হয় ২০০৮ সালে। পেশাদার গলফে শুরুতেই সাফল্যের দেখা পান। ভারতের পুনেতে পিজিটিআই প্লেয়ার্স চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ নেন সিদ্দিকুর। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সিদ্দিকুরের। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এশিয়ান ট্যুরে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন এই গলফার। গৌরব উজ্জ্বল এই স্মৃতিকে রঙধনুর রঙে রাঙান সিদ্দিক। সে বছরই ব্রুনাই ওপেন জিতে নেন এবং এশীয় গলফারদের র্যাংকিং এ ৯ এ উঠে আসেন বাংলাদেশী এই গলফার। একই বছর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জিতেন সিদ্দিকুর। ২০১৩ এর শেষের দিকে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন গলফ টুর্নামেন্ট জিতে নিজের মুকুটে আরোও একটি পালক যোগ করেন সিদ্দিকুর। ২০১৬ সালে ব্রাজিল অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ‘বাংলার টাইগার উডস’ সিদ্দিকুর রহমান।