বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন এবং একটি থ্রিলার

মাহমুদুর রহমান: ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে, কিংবা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে সুভাষ চন্দ্র বসুর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কটকে প্রবাসী বিখ্যাত উকিল জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী বসুর নবম সন্তান সুভাষ। তাঁর জন্ম ইংরেজি ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি।
বসু পরিবার অত্যন্ত পরিচিত, প্রভাবশালী এবং স্বনামধন্য পরিবার ছিল সে সময়ে। সুভাষ বসুর দাদা শরৎ বসুও পরবর্তীতে নামজাদা উকিল হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সুভাষও ছিলেন মেধাবী। দর্শনে ‘বিএ’ সম্পন্ন করার পর সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু বিপ্লবের মন্ত্রে যিনি দীক্ষিত, তিনি ব্রিটিশের চাকরী করবেন কেন!
এরপর সুভাষ একে একে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি একসময় কংগ্রেসে যোগ দিলেন। পেলেন উচ্চ পদ। গান্ধী তখন ‘সত্যাগ্রহ’, ‘অসহযোগ’ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সুভাষের মত ছিল ‘অহিংসা’ থেকে স্বাধীনতা আদায় সম্ভব নয়, স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়।
সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনের উত্থান পতনের নানা ঘটনা নিয়ে সাম্প্রতিক কালে তৈরি হয়েছে একটি সিরিজ। নাম, ‘বোসঃ ডেড অর অ্যালাইভ’। মূলত সুভাষ বসু একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান বলে কথিত হলেও অনেকদিন পর্যন্ত ভারতবাসী বিশ্বাস করতো, তিনি তখনও জীবিত।
‘সুভাষ জীবিত, কি মৃত?’ এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় এই সিরিজ। ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের নয় পর্ব নিয়ে এই সিরিজটির ব্যপ্তি। সিরিজে সুভাষের জীবনের সূচনা থেকে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনা, অর্থাৎ তিনি মৃত, কি জীবিত, সে প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়েছে।
নাম ভূমিকায় অর্থাৎ সুভাষ বসুর চরিত্রে রাজকুমার রাও অভিনয় করেছেন। সুভাষের জীবন নির্ভর সিরিজ এবং সেখানে রাজকুমার রাও এর মতো চমৎকার অভিনেতার উপস্থিতি, সব মিলিয়ে দর্শক লুফে নিয়েছে সিরিজটি। আইএমডিবি-তে এর রেটিং ৯.১/১০
মূলত সুভাষ বসুর জীবন এবং কর্মের অনেক কিছুই ফুটে উঠেছে স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই সিরিজে। রাজকুমার রাও এর অভিনয় চমৎকার। নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
থ্রিলার-ধর্মী হওয়ার কারনে সিরিজে সাসপেন্স রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার ফ্ল্যাশব্যাক এবং চলমান সময়ে আসা যাওয়া লক্ষণীয়। স্ক্রিপ্ট এবং সিনেম্যাটোগ্রাফির এই জায়গাটিতে আরেকটু যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল। কেননা, যেহেতু থ্রিলার এবং সংক্ষিপ্ত সময়ে অনেক কিছু দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, সেক্ষেত্রে সুভাষ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা না থাকলে দর্শকের বুঝতে সমস্যা হবে।
এছাড়া সিরিজটি প্রশংসনীয়। মূলত এটি সুভাষের জীবনী নয় বরং তাঁর মৃত্যু-রহস্য নিয়ে নির্মিত একটি থ্রিলার। সে হিসেবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের মাঝে সুভাষের জীবন, কর্ম এবং একটি থ্রিলার উপহার দিতে পেরেছেন সিরিজের পরিচালক, চরিত্ররা এবং পুরো ইউনিট।