ছুটিহোমপেজ স্লাইড ছবি
সেন্ট মার্টিন- প্রবালদ্বীপের হাতছানি

মৃন্ময়ী মোহনা: প্রবাল – নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে রহস্য। এই প্রবাল আসলে একশ্রেণীর সামুদ্রিক প্রাণী। এরা প্রাণী হওয়া সত্বেও জীবনের একটা সময় থেকে সাগরের নিচে কোন দৃঢ় তলের উপর আসন তৈরি করে বাকি জীবন পার করে দেয়। নিজের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসরণের মাধ্যমে শক্ত পাথুরে খোলস বা বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে এরা। অস্মীভূত প্রবালের দেহাবশেষের উপর নতুন করে আবার প্রবাল বসতে পারে। এভাবে প্রবালগুলো বড়সড় পাথুরে আকৃতি ধারণ করে। এভাবেই তৈরি হয় প্রবাল দ্বীপ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। স্থানীয় লোকজন একে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেই ডাকতো। ১৯০০ সালের দিকে এক খ্রিস্টান সেইন্টের নামে এর নামকরণ হয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে সেন্ট মার্টিন এক স্বর্গের নাম।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে টেকনাফগামী যেকোনো বাসে উঠে পড়তে হবে। নন -এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১০০০ এবং এসি বাসভাড়া ১৭০০-১৮০০ টাকার মধ্যে।উল্লেখযোগ্য বাসের মধ্যে রয়েছে, শ্যামলী, সেন্ট মার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি। টেকনাফ থেকে শুরু জাহাজে করে নদী আর সমুদ্রপথে ভ্রমণ। নাফ নদীর অনিন্দ্য সুন্দর রূপ, সী-গালের বিচরণ,নদী ও সাগরের মোহনা দেখতে দেখতে শেষ হবে ২-২.৫০ ঘন্টার ভ্রমণ। টেকনাফ থেকে প্রতিদিন বেশকিছু জাহাজ সেন্ট মার্টিন যায়। কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যেগুলোর আপ-ডাউন ভাড়া হিসেবে গুণতে হয় ৬০০-৮০০/- টাকা। তবে ইচ্ছে করলে ট্রলার বা স্পিডবোটেও সেন্ট মার্টিন যাওয়া যায়।তবে সেক্ষেত্রে আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।

কোথায় থাকবেন?
সেন্ট মার্টিনে বর্তমানে গড়ে উঠেছে অনেক উন্নতমানের রিসোর্ট। রাত্রি যাপন করতে হলে বিচের কাছাকাছি রিসোর্টে থাকাটাই ভালো। বিচ থেকে দূরত্ব ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় বিভিন্ন দামে রিসোর্টগুলোতে বুকিং দেওয়া যায়।২০০-১৫০০ টাকা সবধরণের ঘর রয়েছে রিসোর্টগুলোতে। বিচের ধারে ক্যাম্পিং করারও ব্যবস্থা করা যায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে।
কি দেখবেন?
সেন্ট মার্টিন পুরো দ্বীপই যেনো মায়াময় সৌন্দর্যের আধার। সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়াগাছের ঝোঁপ, প্রবাল, সমুদ্রের সুবিশাল জলরাশি- সবকিছুই মনের পিপাসা মেটাবে। এছাড়া ট্রলারে করে বা ভ্যান অথবা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় ছেঁড়াদ্বীপে। বিশাল সাগরের মাঝে ছোট্ট এ দীপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকাটাও ভ্রমণের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এছাড়া পুরো বিচ সাইকেলে চড়ে ঘুরে আসা যায়। জেটি থেকে আধা ঘন্টা হাঁটা দূরত্বে গলাচিপা নামের একটি জায়গা আছে। যেখান থেকে বিচটাকে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। রয়েছে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের তৈরি একটি বাড়ি। পর্যটকদের জন্য যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। সেন্ট মার্টিনের সুমিষ্ট ডাব, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছভাজা সবকিছুই খুব উপভোগ্য। মোট ৩/৪ দিন হাতে রেখে দ্বীপটি ঘুরলে আনন্দ উপভোগ করা শতভাগ সফল করা সম্ভব।

বর্তমানে পর্যটকদের নানারকম অসচেতনতায় দ্বীপের পরিবেশ হুমকির মুখে। ভ্রমণপ্রেমী মানুষের তাই সচেতন হতে হবে দ্বীপের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে।