বিনোদনহোমপেজ স্লাইড ছবি
স্টিভেন স্পিলবার্গ কিংবা একজন সিনেমার জাদুকর

মাহমুদুর রহমান: ১৯৪৬ সাল। আমেরিকার ওহিও সিনসিটি শহরে এক ইহুদী পরিবারে জন্ম নিলেন একটি ছেলে। ইহুদী পরিবারের কথাটি উল্লেখ্য কেননা, সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরের। পিয়ানিস্ট লিয়া পনসার আর ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আর্নল্ড স্পিলবার্গ তাদের ছেলের নাম রাখলেন স্টিভেন অ্যালান স্পিলবার্গ
স্টিভেনের বাবা মা যথেষ্ট গোঁড়া ছিলেন। ছেলেবেলায় তাই স্টিভেনের নিজের ইচ্ছে মতো সবকিছু করতে পারে নি। ১৯৫৮ সালে বয় স্কাউটে যোগ দিয়ে সে কিছুটা মুক্তি লাভ করে। আর এখানেই ফটোগ্রাফিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। পরের বছরই ৮ মিলিমিটারে নয় মিনিটের একটি ছোট চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলেন। একজন শিল্পীর জন্ম হয়েছিল হয়ত সেদিন।কিন্তু বাবার ইচ্ছের কাছে কিছুটা থমকে যেতে হলো স্টিভেনকে। ফিল্ম জগত এবং চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছেটা দমিয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়া শুরু করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর নিজের অদম্য চেষ্টায় তিনি স্টুডিও পাড়ায় নিজের কিছুটা জায়গা করে নিতে পারলেন। মজার ব্যপার হলো ততদিনে ছোট ছোট বেশকিছু চলচ্চিত্র তৈরি করে ফেলেছেন।
বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো ১৯৭৪ সালের কিছু আগে। এই বছর তিনি ইউনিভার্সেল স্টুডিও থেকে তিনি তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম তৈরি করেন। কমেডি ধাঁচের ‘সুগারল্যান্ড এক্সপ্রেস’ মুক্তির পরই আলোড়ন তুলেছিল। পরবর্তী বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নেয়। কোন পরিচালকের জন্য এ অতি সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু কেবল ভাগ্য না, যার প্রতিভা আছে, তিনিই পুরস্কার লাভ করে। স্পিলবার্গ নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন।
প্রতিভার পরিচয় তিনি তুলে ধরতে থাকেন। ১৯৭৫ সালে তাঁর তৈরি ‘জ্যস’ সারা বিশ্বে তাকে পরিচিতি এনে দেয়। এরপর একের পর এক নির্মাণ করে চলেন ক্লোজ এনকাউন্টার উইথ দ্য থার্ড কাইন্ড, ই.টি., রাইডার্স অব দি লাস্ট আর্ক, সিন্ডলার’স লিস্ট, জুরাসিক পার্ক, সেইভিং প্রাইভেট রায়ানের মতো পৃথিবী কাঁপানো সব ছবি। যা আজ স্পিলবার্গকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নানা ঘরানার চলচ্চিত্র করেছেন স্পিলবার্গ। তাঁর ঝুলিতে আছে ‘ই.টি.’, ‘জুরাসিক পার্ক’-এর মতো সাই ফাই চলচ্চিত্র। ২০০১ সালে স্পিলবার্গ স্ট্যানলি কুবরিকের শুরু করা ‘এ আই: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রকল্পটি শেষ করেন। আবার তিনি ‘লিঙ্কন’ এর মতো জীবনীভিত্তিক রাজনৈতিক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তাঁর ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ অনেক দর্শকের প্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকার শীর্ষে।
বেশ বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করার প্রবণতা আছে স্পিলবার্গের। ‘ই.টি’ যথেষ্ট বড় প্রকল্প ছিল। ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ তেমনি। তাঁর অন্যতম বড় কাজ ‘লিঙ্কন’। আমেরিকায় কালো মানুষদের অবমাননা নিয়ে ১৯৮৫ সালে বানানো ‘দ্য কালার পার্পল’ তাঁর শিল্পী মন এবং মানবতার পরিচয়।
অগণিত পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন স্পিলবার্গ। তাঁর মধ্যে অস্কার পুরস্কার উল্লেখ্য। ‘লিঙ্কন’-এর জন্য বারোটি ক্ষেত্রে মনোনীত হয়ে দুটি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার লাভ করেন স্পিলবার্গ। এছাড়া তিনি ব্রিটিশ না হয়েও পেয়েছেন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ খেতাব, ‘নাইটহুড’।