ক্রিকেটখেলাহোমপেজ স্লাইড ছবি
২২ গজের বিনোদনের ফেরিওয়ালা

আরমান হোসেন পার্থ: একটা সময় পেস বোলিং এ জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল ক্যারিবীয়দের। ক্লাইভ লয়েড, ল্যান্স গিভস, এন্ডি রবার্টস, কার্টলি এম্ব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ম্যালকম মার্শাল এই এক একটা নাম যেন এক একটা ইতিহাস। আক্ষরিক অর্থেই এক যুগেরও বেশি সময়ধরে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করেছে তারা। ক্যারিবীয় উপন্যাসের আরেকটা চরিত্র স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। আশি-নব্বইয়ের দশকে ৯০.২০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা ভিভকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ভয়ংকর ব্যাটসম্যান মানা হয় এখনও।
ক্যারিবীয়দের কব্জির জোর অন্য যে কারো থেকে বেশি এই কথা অবলীলায় বলা যায়। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি ফাইনালের কথায় ধরুন, ইডেনে বেন স্টোকসকে কে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন আরেক দানব কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। শেষ ওভারে ইংলিশদের বিপক্ষে দরকার ছিল ১৯ রান। টানা চার বলে চার ছক্কা। ভাবা যায়! মাইক্রোফোন হাতে কমেন্ট্রিবক্স থেকে ইয়ান বিশপ সেদিন বলেছিলেন “রিমেম্বার দ্য নেইম, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট”।
এই ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্রিকেটারদের চরিত্রই এমন এরা আপনাকে মনে রাখতে বাধ্য করবে। ছিপছিপে গড়নের লিন্ডল সিমন্স থেকে শুরু করে হালের ক্রিস গেইল ছক্কা মারতে সিদ্ধহস্ত সবাই। ক্যারিবিয়ানরা বেশির ভাগ ছয়গুলো গ্যালারিতে আছরে পরে। ওদের আরো দুটা দানব আছে একজন আন্দ্রে রাসেল আরেকজন কাইরন পোলার্ড। আজকের আয়োজন কাইরন পোলার্ডকে ঘিরেই।
ত্রিনিদাদে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার যে কোন মূহুর্তে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারেন। স্পেশালি টি-টোয়েন্টিতে। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে কোন জায়গায় কম যান না পোলার্ড। ফিল্ডার পোলার্ডকেও ফেলে দিতে পারবেন না। বাউন্ডারি লাইনে প্রায় অসম্ভব বলকেও তালুবন্দী করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হার্শেল গিবস ও যুবরাজ সিংয়ের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ছোট ফরম্যাটে ওভারের প্রতিটি বলই শূন্যে ভাসিয়ে সীমানাছাড়া করেছেন পোলার্ড৷
৬ ফিট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই দানবের কিছু দানবীয় কীর্তি নিচে আলোকপাত করা হল
এক নজরে কাইরন পোলার্ড
• ঘরোয়া & আন্তর্জাতিক মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০০* রান ২৭৯* উইকেট & ২৮৭* ক্যাচ নিয়েছেন।
• প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০০* টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা একমাত্র ক্রিকেটার কাইরন পোলার্ড।
• পোলার্ডই একমাত্র ক্রিকেটার যে কিনা ছোট ফরমাটে ৭০০০+ রান & ২৫০+ উইকেটের ডাবলের মালিক।
• টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ২৩ ট্যুর্নামেন্টের ফাইনালিস্ট দলের একজন ছিলেন এই ক্যারিবিয়ান। যা সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার রেকর্ড।
• ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ বিভিন্ন সময়ে এখন পর্যন্ত ১৭ টি দলের জার্সি গায়ে মাঠ মাতিয়েছেন পোলার্ড।
• এর মধ্যে ৬ টি দলের হয়ে মোট ১৩ বার শিরোপা উচিয়ে ধরেছে পোলার্ড।
• আর একটি মাত্র অর্ধশতক করতে পারলেই অর্ধশতকের অর্শতক করে ফেলবেন পোলার্ড।
• ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট দলের একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারের নাম কাইরন পোলার্ড।
• ১৫০.৪০ স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় কতটা ভয়ংকর ব্যাটসম্যান পোলার্ড । দানবীয় এই স্ট্রাইক রেটে প্রতি ম্যাচে ৩০.৮৫ গড়ে রান তুলেছেন।
• আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন পোলার্ড। ক্যারিয়ার জুড়েই যেখানে খেলেছেন ৪৯৯* ম্যাচ সেখানে এক মুম্বাইয়ের হয়েই খেলেছেন ১৭০ ম্যাচ।
• মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ৪ বার আইপিএল শিরোপা জিতিয়েছেন সাথে চ্যাম্পিয়নস লীগেও ২বার মুম্বাইকে শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ মুম্বাইয়ের হয়ে ৬ টি-টোয়েন্টি টাইটেল আছে পোলার্ডারের ঝুলিতে।
• টি-টোয়েন্টিতে গেইলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক কাইরন পোলার্ড। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে রান ছিল ৯৯৬৬। ১০০০০ রানের কোটা পূরন করতে দরকার ছিল ৩৪ রান । ৫০০* তম ম্যাচে করলেন ঠিক ৩৪ রানই। গেইলের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজারি ক্লাবে নিজের নাম তুললেন পোলার্ড।
বিঃদ্রঃ এক নজরে কাইরন পোলার্ড এই রেকর্ডগুলো গত ২০২০ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে লেখা।